বুধবার, ৩১ মার্চ ২০২১, ০৬:১৫ অপরাহ্ন
আলতাফ শাহনেওয়াজের কবিতা
ডাইনির খাতা
ফাটলজাগা রাতে
ঘুটঘুটে চাঁদ বোনা টালমাটাল আকাশে
বৈদ্যুতিক তারা গোনা শেষে
রাত্রির গভীরে ঢুকতে ক্লান্ত লাগে;
যেমন জন্মের পর
পাশে থাকা রজনীগন্ধা
এবং এবং অবিরত পুষ্পগুচ্ছ পাশে রেখে,
আর গুটি গুটি চোখ ফোটা থেকে
কাফন সংগ্রহের
আগ-পর্যন্ত
ক্লান্তিকর ভারী সৌরজগৎ
কিছু নয়—
এক মূর্ছিত গাছের পরে নুয়ে পড়ে,
কাঁপে অনেকবার;
তেমন শেষবার ‘সরি’ বলার আগে
ডাক্তারের চোখের নিচে
জড় হওয়া অভ্যস্ততার ক্লান্তি
পাপড়ি খুলে
একটু আলগা হয়—
সেসব থেকে দূরে
হাসপাতালের সুঘাতিনী করিডোরে
মৃতপ্রায় সন্ধ্যার সাথে রক্তক্ষয়ী পায়চারি করে টুকু…
প্রগলভ আকাশের নিচে
উড়ন্ত প্রগলভতা জেগে আছে ঘন আকাশের নিচে,
মানুষের ঘোর বিস্ময়, রক্তাক্ত দিব্যজ্ঞান
শুয়ে থাকা মানুষের ঢলে পড়ার মুহূর্ত—
এই সব আকাশ ফোলানো মেঘ, গলে
টিনের মসজিদে অবলীলায় দুচোখ ভাসিয়ে দিয়েছ
বুঝি আজ! সন্ধ্যার ওজুর পানি গড়িয়ে পড়লে
ভেসে যাচ্ছে কি আজান?
এখনো পশ্চিম দিক মার সেজদার মধ্যে
ভেসে ভেসে ওঠে—
কথা না-বলা হারিকেনের হীনজ্যোতি আলো, দপ করে
আমাকে নিভিয়ে, সুনীল দর্জির দোকানে রাত্তিরে কাটাকাটি করে;
মড়ার ফাটানো মাথা ছুটে যায় আমার দিকেই,
রাত পোহালে অজস্র ফোনকল
আমায় জড়িয়ে, ধান কাটা মাঠের ধুলোয়
গড়াগড়ি খায়… হ্যালো হ্যালো… এই সব
আকাশ ফোলানো মেঘ, গলে পড়তে
তাকেই দেখেছিলাম তোমার চোখের নিচে,
খুব আক্রোশে বিলাপ সে চোখের পাশ থেকে
বারবার মুছিয়ে দিচ্ছিল উন্মুখ আমাকে!
তখনো মৃতের মুখে উড়ন্ত প্রগলভতা
আকাশের নীলের ওপর থেকে—
দালাল-মদ্যপ আরও আকাশের নিচে…
সিভিলাইজেশন
‘যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা’
—জীবনানন্দ দাশ
স্তব্ধতা ঘুম হয়ে আছে। চারপাশে সন্দেহ, কে কাকে অনুসরণ করছে! দিনশেষে অফিস থেকে তাই ভিন্ন ভিন্ন পন্থে ঘরে ফিরি, যেন কেউ চিনিতে নাহি পারে। এমনকি বাড়ির আব্রুঘেরা অভ্যন্তরেও কেহ যেন জানিয়া না যায়, প্রকৃতই লোকটা আমি কেমন, কতটা গোপাল! তাই রোদের দিকে মুখ রেখে চেহারায় কালো ভাবটা গাঢ় করে তুলি রোজ। আর চোরছেচড় গোছের এই ফোরটোয়েন্টি ছদ্মবেশ—বাটারঅয়েলমাখা নিতান্ত মুখটি সর্বদা বাঁচিয়ে চলা—এটা একটা খাঁটি গোরুর দেশি দুগ্ধের মতন, উচ্চতর ডিসকো ডান্সের ঘটনাও বটে, এবং প্রভাবান্বেষী। সেহেতু চম্বুকের খান খান টান যেইদিকে, অ্যানিমেটেড রোবট হওয়ার প্রত্যাশে চোখ বুজে সেই ধামেই সালাম জানাই—হুররে… সঙ্গে সাধিত হয়ে মনোদহে বাঁধিত হই সদা সন্দেহে, বান্ধবীর ঘরটি হুবহু বান্ধবীর মতো সানস্ক্রিন মেখে থাকে কি না, জিএফদিগের লৌহবাসরে কি আমাদের সম্ভাব্য পত্নীগণ থাকেন?
এ পর্যন্ত পড়ে আমার দিকে ইয়ারদোস্তের সংশয় নিয়ে তাকাল মার্ক জাকারবাগ। আর সেই সন্দেহের অগোচরে আমিও মম চেহারাটি একটা খুনে লালগোলাপের টকটকে হাসির ভেতরে পাচার করে দিলাম। সর্বচোখা জাকারবাগের নীলভূমের গভীরে থাকা কাঁটা আমাকে যদি দুধেআলতা পানির আকারে জলবৎ তরলং বুঝে ফেলে—এই ধন্দে অনেককাল থেকে স্থির—ঠায় বসে আছি মিশেল ফুকোর পাশে, সিভিলেইজেশনের ধবল ম্যাডনেসময় সুধাতপোবনে।
হালার কানার বাচ্চা, আমাকেও আমি আমার চেহারা দেখাব না!