বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর ২০২১, ০৮:১২ অপরাহ্ন
শ্রাবণ সৌরভের কবিতা
রোদ ঘন হয়ে আসছে
রোদ ঘন হয়ে আসছে, সেই গাঢ়ত্বে হেঁটে বেড়ানো শালিকের দুপুর
এখন উপশহরের শ্মশানের মতো নির্জন।
সুন্দর বিষণ্নতায় হেলে পড়ছে সূর্য, সমুদ্রের ঢেউ ছাড়া সব চুপচাপ। শিশির শুকিয়ে যাওয়ার সময় যে অন্ধ লোকটি সেতারা বাজাতো, চোখ ভর্তি কুয়াশা নিয়ে সে বসেছে চোখ ফিরে পাওয়ার আরাধনায়। যে তরুণ পাখির খামার করতে চেয়েছিল অরণ্যে সে এখন অজস্র ঝরে যাওয়া পাতা, উড়ে যাওয়া পাতা।
বদলে যাচ্ছে সব, তুষার ও বরফের মধ্যবর্তী তাপমাত্রা হয়ে বসে আছি।
রোদ ঘন হয়ে আসছে, নতুন অতিথি দিয়ে ভরে যাচ্ছে আমার শ্মশান।
বর্তমান
জলের ফল, আগুনের সংশয় নিয়ে একটি সমুদ্র সম্পর্কিত নীল গাছ
বর্ষায় পুনরায় পুড়বে বলে,
গোপনে গভীর শীতে জন্ম দিতে থাকে হরিৎ পাতা।
বিনিময়ে ঘুমের ডাকবাক্সে বহুদিনপর আসা স্বপ্নের চিঠি,
ছড়িয়ে পড়ে টুকরো টুকরো।
আকাশে ছড়ানো যতসব কাগজের পাখি যেন গাইবে গান
তন্দ্রার ভেতর বহুদিন, আয়নাকে তুমি বলে ডাকি!
হয়েছি কচ্ছপ, যাপন দহনে মাথা গুঁজে টেনে এনে ছাদ
স্বপ্নের বুক থেকে তিনবেলা খাচ্ছি বিষাদ।
দায়মুক্তি
বর্ষাকালে মৃত্যু হলে কাউকে কাঁদতে হবে না,
এমন দায়মুক্তির প্রিয়তম আষাঢ়।
রোপন করেছি ব্যক্তিগত হলফনামায়
মৃত্যুর অধিক যে
দৃশ্য তাকে যতটুকু পেয়েছে,
অদৃশ্য তার থেকেও বেশি পায়।
ক্রসফায়ার
গভীর রাতে পুলিশ ধরেছে স্বপ্নে,
প্রেমে মাতাল আমি দৌড়াচ্ছি।
আমি দৌড়াচ্ছি তোমার দিকে; ঠিকানা জানি না, মুখ চিনিনা, তবুও জানি খুঁজে পেতে হবে ক্রসফায়ারের আগে, জানি আজ রক্ষা নেই, জানি আজ কেয়ামত।
একটানা গুলির মধ্যে তবুও দৌড়াচ্ছি হাশরের ময়দানের দিকে,
তুমি বিচারক, আমি মৃত্যুর আগে ঘুমাবো না আর!
আবহমানকাল
আরো কিছু পূর্ণতা থাক রাত্রির, আরো কিছু অন্ধকার স্বপ্নের। গহীন হতে এক তীরন্দাজ চোখ লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারে তীর,
আরো কিছু জোছনা ভেঙ্গে হয়ে যায় চৌচির।
জাদুর বাক্স খুলে দেখি খননের মুখে বহুকাল, শূন্য থেকে আটলান্টিক সমস্ত দুঃস্বপ্ন জুড়ে একান্ত কেবলই ঘুম আমার।
এমন বহুরাত পাথরের কান্না শুনে কাটিয়েছি।
অন্তর্গত ঝর্নার পেতে রাখা গিলোটিনে, মাথা পেতে দিয়ে শেষ ইচ্ছা হিসেবে শুনেছি সবুজ পাতার সঙ্গীত।
তৃষ্ণায় সমস্ত ঠোঁটের নদীতে পেয়েছি বরফ,
অরণ্য নামে গ্রীষ্মের যে জানালা ছিল তাকে মনে হয়েছে দারুণ চকোলেট ;
শত মুখের শহর তার সবটুকু খেয়ে গেছে।
এমন বহুরাত অদেখা পাখির চোখে ঘুমিয়ে পড়েছি;
মৃত্যুকে স্থগিত রেখে জ্বেলেছি কেবল ধূলোর বহুবিধ আলো
ধূলোর পাখি যেন জলের পৃথিবীতে থাকে ভালো।