মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১, ০৭:৫২ অপরাহ্ন
শিশ্ন-মুণ্ড আচ্ছাদন তখনো অবিচ্ছিন্ন
সতীর্থ কথন
লুঙ্গিটা কোথায় গেছে জানি না। স্যন্ডোগেঞ্জিটা একটানে ছিঁড়ে ফেলে দেই। বুক চিতিয়ে দাঁড়াই। বলি, ” ও চো.. মাগি, দেখ দেখ আইজো আকাইট্টা আছি। তোর যত্তসব ভড়ংভাড়ং সব তোর মধ্যেই হান্দাইয়া রাখ। এই দেখ আমার বাড়ার মুখে এখনো কি সোন্দর কুচকাইন্না চামড়া, ঢাইক্কা রাখছে আমার সোনা জাদুরে।” অবিমিশ্র রাগ ক্ষোভ ঘৃণা প্রচণ্ড তেজে বেড়িয়ে আসে আমার মুখ থেকে। আর এসব বলতে বলতে উন্মাদের মত লাফাতে থাকি। কোহিনুর তখন লাল টকটকে চুলার আগুনের মত মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আমি আভরণহীন উলঙ্গ মহাদেব। বাসা ছেড়ে বেরিয়ে কখন গলির রাস্তায় চলে এসেছি নিজেও টের পাই না।
আমি না কি এখন মুসলিম! কলমা পড়া মোসলমান। খালি কয়েকটা মন্ত্রের মত বিদেশি অবুঝপনা একটা ভাষায় বলেছিলাম, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু… “! তখন থেকেই আমি পঞ্চান্ন বছরের সমস্ত আচার ধর্মকে খেদিয়ে একটানে এক আগ্রাসী ধর্মের ষাঁড় হয়ে গেলাম! কি আশ্চর্য!
বেনিয়া বংশে জন্ম আমার। কোনদিন বাইন্নাতি করি নাই। যা হইতে চাইছিলাম হইতে পারি নাই। শেষপর্যন্ত হইলাম কী না বকধর্মের কাণ্ডারি! ভালোই তো ছিলাম। পঞ্চাশোর্ধ্ব জীবন একাকী একজন ( একাকী বা বলি কীভাবে, অনুচ্চারিত অন্তর্গত অবস্থানে একজন ছিলো) বেশ কাটছিলো। পড়ালেখা শেষ না করতে পারলেও যা শিখেছিলাম তা দিয়ে বেশ চলে যাচ্ছিলো। নির্দিষ্ট চাকরির চেষ্টা করিনি, হয়ও নি। ঘুরে ঘুরে ছাত্র ছাত্রী পড়াতে শুরু করেছিলাম। মোটামুটি নাম করার পরে আর সমস্যা হয় নি। এই টিউশনি করতে গিয়েই অন্য এক আকর্ষণে জড়িয়ে গেছিলাম। সেসব কথা এখন থাক। টিউশনির পাশাপাশি ছিলো সংগঠন। দিনরাত এটাই ছিলো আসল নেশা। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ঘোরাঘুরি আর অল্পবিস্তর লেখালেখি, এভাবেই জীবন যাচ্ছিলো বেশ। যেতেও পারতো শেষ পর্যন্ত। কী এক অলক্ষুণে কাণ্ডে নিস্তরঙ্গ জীবনে তরঙ্গ আনতে গিয়ে সব গুলিয়ে গেলো। সব একাকার হয়ে গেলো। সব ছিঁড়েখুঁড়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।
কোহিনূর বৃত্তান্ত
কান্তম দেবী ওরফে কোহিনুর ইসলামের বয়স চল্লিশ পেরোলেও বোঝা যেতো না। শারীরিক গঠনে মনে হতো ত্রিশও পার হয় নি। রক্ষণশীল কট্টর মুসলিম পরিবারে কোহিনুরের জন্ম। বাবা বিখ্যাত মাওলানা। বড়ভাই ইসলামি ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। নিজে সাধারণ স্নাতক হওয়ায় খুব ভালো কোন চাকরি পায়নি। নিজের চেষ্টায় এরমধ্যেই কয়েকবার চাকরি বদল করে এখন একটা ইনস্যুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট। বিয়ে থা করে নি, ঠিকঠাক মানুষের অভাবে। বয়স বেড়ে যাওয়ায় একসময় ঠিক করেছে আর বিয়ে করবে না। একটা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে থেকে কাজকর্ম করে চলে। বাড়িতে টাকা পয়সা দিতে হয় না। মাঝে মাঝে বাড়িতে গিয়ে বরঞ্চ কয়েকদিন থেকে কিছু নিয়ে আসে। ছোটোবড়ো সব ভাইবোনের বিয়ে হয়ে গেছে। কোহিনুর সবার সাথে ঠিক মানিয়ে নিতে পারে না। একটু রগচটা। রেগে গেলে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এ কারণে ইচ্ছে থাকলেও সবসময় বাড়ি যাওয়া হয় না। নিজের মত জীবন চালিয়ে যাহোক একরকম চলছিলো। এই জীবনধারায় হঠাৎ পরিবর্তন আসে। মধ্য বয়সে এসে প্রেমে পড়ে যায় এক পঞ্চাশোর্ধ বিধর্মী যুবকের! হ্যাঁ পঞ্চাশোর্ধ হলেও দেখতে যুবকই মনে হয় সতীর্থকে।
সতীর্থ এই শহরের একটি নামকরা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রধান। এখানকার অনেক সংগঠকই তার হাতে তৈরি। পরিচয় হওয়ার পর থেকে একটু একটু কাছে আসা। সতীর্থর কাছে, সতীর্থর সংগঠনের চারতলার অফিসে কোহিনূরের আসাযাওয়া শুরু হয় নিয়মিত। সতীর্থ কোহিনূরকে কবিতা আবৃত্তি শেখায়, সংগঠন করতে শেখায়। দুজন দীর্ঘ সময় পার করে সংগঠন কক্ষে। তখন কেউ থাকে না। দুজন কাছাকাছি চলে আসে। মনের অর্গল খুলে দেয় দুজনে। দুজনের দীর্ঘকালের জমে থাকা কথামালা চলতে থাকে। কখন দুজনে আরো কাছে চলে আসে কেউ টের পায় না। একসময় সম্পর্কটা পরিণতির দিকে যাত্রা করলে সামনে আসে সমাজ-সংসার-ধর্মের বিবিধ প্রশ্ন।
জ্ঞাত-অজ্ঞাত যাপনক্রীয়া
সতীর্থ গোঁড়া হিন্দু না হলেও নিজের ধর্মের, সংস্কারের পরিপন্থী কিছু করতে অপারগ। নিজের রক্তসম্পর্কীয় স্বজনদের ছেড়ে কিশোর বয়স থেকেই অন্য এক সংসারের, অন্য এক পরিবারের আধা-কাণ্ডারী। সেই সংসারে যদিও লজিং মাষ্টার, সেটা বাইরে। ভেতরে দুই শিক্ষার্থীর যাবতীয় জীবনের ভার, তাদের ভবিষ্যৎ নির্মানের নিয়ামক হয়ে ওঠে সতীর্থ। এছাড়াও আছে অন্য এক টান। সতীর্থের দুই শিক্ষার্থী সৌনিক আর কৌশিকের মা নিরোদ বালার স্বামী আধা বাউণ্ডুলে মানুষ; সংসারে থেকেও তিনি সংসার বিমুখ। এই অবস্থায় সতীর্থই লজিং মাষ্টার কাম সংসার কর্তা। নিজে এই বাসায় লজিং থাকলেও বাইরে আরো কয়েকটা টিউশনি করে যা পায় সেখান থেকেও কিছু দরকারে অদরকারে খরচ করে এই সংসারের পেছনে। নিরোদ বালা তার দুই ছেলে এবং নিজেকে সতীর্থর হাতে সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্তে দীর্ঘকাল পার করছেন। তাঁর সন্তানরা শিক্ষা দীক্ষায় যেমন সাহিত্য-সংস্কৃতিতেও তেমন পারদর্শী হয়ে উঠেছে। স্বামী তো থেকেও নেই। কোথায় কোথায় থাকে মাঝে মাঝে আসে। গান বাজনার প্রতি ঝোঁক আছে। আধা বাউল টাইপ মানুষ। সংসারে সন্তান ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে নি। এসব কারণে সতীর্থই একমাত্র ভরসা নিরোদ বালার। সতীর্থও বাইরে চিরকুমার থেকেও নিরোদ বালার কাছে নিজের কৌমার্য বিসর্জন দিয়েছে বহু আগে। সতীর্থ আর নিরোদ বালা বেশ ভালোই জীবনের ছক এঁকে নিয়েছিলো। হঠাৎ সেখানে আসে ঝড়। কোথা থেকে এক কোহিনূর এসে ভাসিয়ে নিয়ে যায় তাদের সুখের নষ্টনীড়! নিরোদ বালা বুক চাপড়ে কাঁদে, সে কান্না নিজের ভেতরেই চেপে রাখে। কাকে বলবে? কাকে বোঝাবে তার জীবনের এই অব্যক্ত জ্বালার কথা।
বলি বাহার
কোহিনূর সতীর্থের বিয়েটা আড়ম্বরহীন ভাবে একদিন হয়ে গেলে সতীর্থ বুক উচিয়ে সকলের সামনে কোহিনূরের পরিচয় করিয়ে দেয় ‘আমার বউ কান্তম ‘। কোহিনূর বিয়ে করে কান্তম দেবী হয়ে ওঠে। শাখা সিঁদুর পরে কোহিনূর হয়ে যায় কান্তম! সতীর্থের সাথে সব জায়গায় একসাথে যায়। সংগঠন করে। সংগঠনের সভাপতি সতীর্থ, সাধারণ সম্পাদক কান্তম দেবী। প্রকাশনা সংস্থাও একটা দাঁড় করায় দুজনে। মন্দিরে যায় পুজো দেয় প্রসাদ নেয়। অফিসের কাছেই কম ভাড়ায় একটা বাসা নিয়ে থাকে। বেশি সময়ই দুজনে অফিসে কাটায়। সংসার অফিস সংগঠন দুজনের বেশ চলতে থাকে জীবনের পথ। সতীর্থ সবাইকে গর্ব করে বলে ‘আমি একটা মুসলমান মাইয়ারে হিন্দু বানাইছি, না হলে কে বিয়ে করতো?’ হিন্দু সমাজে, সংগঠনের সভ্যদের কাছে এটা বেশ গর্বের। সংগঠনের অফিসেও নিয়মিত পুজো আর্চা হয়। কান্তম দেবী তাতে অংশ নেয়৷ সংগঠন আরো বিশাল কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িয়ে যায়।
এরমধ্যেই কান্তম সতীর্থের ঘর আলো করে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হয়। সেই সন্তান কোলে পিঠে নিয়েই চলতে থাকে সতীর্থ-কান্তমের সংস্কৃতি সেবা, সমাজসেবা সাথে পেটসেবাও। তাদের এই যুগল জীবন অনেকের কাছেই হয়ে ওঠে অনেকটা ঈর্ষার বস্তু। বেশ কয়েক বছর যায় তাদের এভাবেই।
নীরোদ বালা তার সন্তানদের নিয়ে এখন নিজস্ব জীবনযাপন করছে। মাঝে মাঝে খুব আপন কাউকে পেলে বোঝায় তার দুঃখের কথা। বলে – সতীর্থ আমার সবকিছু ধংস করে দিয়ে গেছে। আমি এখন কি নিয়ে থাকি?
কথা বলতে বলতে নীরোদ বালা বুক চাপড়ায়। আবার ভয়ে নিজের মুখ নিজেই চেপে ধরে। কেউ শুনে ফেললে সর্বনাশ। এরমধ্যে নিজের বড় ছেলেই একদিন বেশ ভালোভাবে শাসন করেছে নীরোদ বালাকে। ছেলে বলে দিয়েছে আর যেনো কখনো ওই ছোটলোক সতীর্থের নাম মুখে না আনে। তবু মন মানে না হঠাৎ কাউকে আপন মনে হলেই নীরোদ বালা মনের দুঃখ উজাড় করে দেয়। কাঁদতে কাঁদতে নীরোদ বালা অভিশাপ দেয় “ও আমার সাথে যে বেঈমানীটা করেছে ওর কোনদিন ভালো হবে না। ও রাস্তায় রাস্তায় পাগল হয়ে ঘুরবে। ওকে একদিন আমার কাছে আসতেই হবে “।
উল্টোরথ
হঠাৎ একদিন খবর আসে সতীর্থ উন্মাদ হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছে, পুরো উলঙ্গ। কথাটা কেউ বিশ্বাস করে, কেউ করে না। কিন্তু ঘটনা সত্য। নীরোদ বালার অভিশাপে কিংবা জীবনের অন্যকোন আবর্তের পাঁকে সতীর্থ সত্যিই একদিন উলঙ্গ হয়ে রাস্তায় নামে। নিজেও জানে না সতীর্থ এভাবে রাস্তায়। রাস্তায় আসবার আগে সে তার ঘরে কোহিনূরকে বলে, ও চো.. মাগি, দেখ দেখ আইজো আকাইট্টা আছি। তোর যত্তসব ভড়ংভাড়ং সব তোর মধ্যেই হান্দাইয়া রাখ। এই দেখ আমার বাড়ার মুখে এখনো কি সোন্দর কুচকাইন্না চামড়া, ঢাইক্কা রাখছে আমার সোনা জাদুরে। অর্থাৎ এখনো সতীর্থের নিম্নাঙ্গের অগ্রভাগ কাটা হয় নি। এখনো তার মুসলমানী করানো হয় নি। যদিও কথাগুলোর কোন মানেই নেই, তবু উন্মাদ সতীর্থের মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এই অকথ্য কথাগুলো।
ধীরেধীরে সকল কথা, সকল ঘটনা প্রকাশ হয়। জানা যায় সতীর্থ এতোদিন যা নিয়ে গর্ব করতো তা আসলে সবই বেনোজলে ভেসে গেছে। সতীর্থ এতোদিন গর্ব করে বলতো ‘একটা মোসলমানের মাইয়ারে হিন্দু বানাইছি। তারে দিয়ে এখন পুজা করাই। কেউ পারছে এই কাজ? আমরা তো এখন দিন দিন কইম্মা শেষ হইতাছি। আমাগো সনাতনীরা তো অন্য ধর্মে বিয়া কইররা ধর্মটর্ম ছাইরা সব মোসলমানের দলে যোগ দেয়; কি মাইয়া, কি পোলা। সেই ধর্মের পাণ্ডারাও বাহ্ বাহ্ করে। বিধর্মী একটা কোনমতে কলমা পড়াইতে পারলেই সাত পুরুষ বেহেস্তে যাইতে পারে।’ এমনই গর্বোদ্ধত সতীর্থের সব গর্ব ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সতীর্থ একসময় বুঝতে পারে সে নিজে কাউকে পাল্টাতে পারেনি উল্টো তাকে পাল্টানোর জন্যই কোহিনূর ফাঁদ পেতেছিলো। প্রথম ধাক্কাটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না সতীর্থ। সবকিছু ভেঙ্গে বেরিয়ে যেতে চায়, কিন্তু পারে না। সন্তানের মায়া সংসারের মায়া তাকে আটকে দেয়। বাধ্য অবাধ্যতার ঘেরাটোপে নিজের সংস্কার, নিজের ধর্ম, নিজের মানসিকতাকে বিসর্জন দেয় সতীর্থ। কোহিনূরের পরিবারের কাছে। কোহিনূরের পরিবারের ক্ষমতার কাছে অসহায় সতীর্থ একদিন ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসুলল্লাহ’ বলে মোসলমান হয়ে যায়। সতীর্থ এই অবস্থা মেনে নিতে পারে না মানিয়ে নিতে চায়। তবু সে ভাবে আমি নামে মোসলমান হইছি, ভেতরে কি আছে কে দেখে? কিন্তু কোহিনূর নাছোড়বান্দা সে এবার সতীর্থের নাম পাল্টে সতীর্থ আলম, নিজে কোহিনূর আলম বানাতে চায়। সতীর্থকে মসজিদে পাঠাতে চায়। পুর্নাঙ্গ মুসলিম হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে উঠেপড়ে লাগে কোহিনূর আর তার কট্টর ইসলামী পরিবার। আর তখনই সবকিছু নিয়ে, সকল অবস্থা-দূরাবস্থা নিয়ে ভেঙ্গে পড়ে সতীর্থ। সতীর্থের ভেতরে ঘুমন্ত অন্য এক সতীর্থ জেগে ওঠে আর নিজের এই অবস্থাকে নিঃশেষ করতে গিয়ে নিজেকে ভেঙ্গেচুরে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতেই যেনো উন্মাদ হয়ে পড়ে। সতীর্থ উলঙ্গ উন্মাদ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। একজন ধীরস্থির অনন্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সংগঠক সতীর্থ বিনা মেঘে বজ্রপাতে বিধস্ত হয়।
পার্থিব-অপার্থিব
সতীর্থ নিজের নাম এভিডেভিট করে সতীর্থ আলম হিসেবে পরিচয় দিয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। স্বেচ্ছায় সজ্ঞানে এই কর্ম সম্পাদনের কথাও জানায় বিজ্ঞপ্তিতে। যদিও জানা যায় না বাস্তবেই সতীর্থ স্বেচ্ছায়-সজ্ঞানে কাজটা করেছে কিনা। সেদিন সতীর্থকে পরিচিত অপরিচিতরা মিলে কোহিনূরের আত্মীয়স্বজনদের সহযোগিতায় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বেশ কয়েক সপ্তাহ তালাবদ্ধ করে রেখেছিলো। শেষে চিকিৎসক এর চিকিৎসায় কিছুটা ভালো হলে তাকে পুরোই পাল্টানো হয়। সতীর্থ নিজের নাম নিশানা পাল্টে আবার সংগঠনে সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিরাজ করতে চাইলে মেনে নিতে পারে না সংগঠকরা। ভেঙ্গে যায় সংগঠন। দীর্ঘকালের বন্ধুজনরা দূরে সরে যেতে থাকে। প্রাইভেট পড়নো বন্ধ হয়ে যায়। সংগঠনের অফিস, প্রকাশনা অফিস সব ছেড়ে দিতে হয়। একসময় কাছের মানুষদের, পরিচিতদের কাছে মুখ দেখাতেই লজ্জা পায় সতীর্থ। দীর্ঘ অজ্ঞাতবাসে চলে যায় সংসার নিয়ে। একসময় আবার ফিরেও আসে। তখন তার মলিন চেহারা দেখে অনেকেরই কষ্ট হয়।
এক পার্কে বন্ধু নূরকে অনেকদিন পরে কাছে পেয়ে সতীর্থ খুলে বসে তার এই অবিমৃষ্যকারী জীবনাচারের অল্প বিস্তর কথকতা।
সতীর্থ : আমি তো ভাই এসব করেছি অন্য কারণে। এখন কাউকে কিছু বলবো না।
নূর : বলেন কি দাদা? তাহলে আসল সত্য কি?
সতীর্থ : আসলে আমি একটা যুদ্ধাপরাধীকে ধরতে চাইছি। আপনাকে চুপিচুপি বলছি আপনি কাউকে বলবেন না। আসলে আমার শ্বশুর একটা খাঁটি রাজাকার। আমি তাকে ধরবার জন্যই ওদের ফ্যামিলিতে ঢুকেছি। আস্তে আস্তে সব তথ্য প্রমাণ যোগাড় করে একে ধরিয়ে দিয়ে আমি আবার আগের জায়গায় ফিরবো।
নূর অবাক হয়ে শোনে সতীর্থের কথা। নূর বিশ্বাস অবিশ্বাসের দোলাচলে সতীর্থের কথা মেনে নেয়।
এর কয়েক বছর পরে নূর দেখে সতীর্থ সংসারে আরো এক সদস্য বৃদ্ধি করে নূরের বাসার কাছেই এক বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছে। সতীর্থের সেই যুদ্ধাপরাধী ধরাটা গল্প না কি সত্যি কাহিনী তা অজ্ঞাতই থেকে যায়!
তবে সতীর্থের শিশ্ন-মুণ্ড আচ্ছাদন তখনো বিচ্ছিন্ন না অবিচ্ছিন্ন তা আর জানা হয় না।