মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১, ০৬:৩৩ অপরাহ্ন
সঙ্ঘমিত্রা হালদারের কবিতা
তোমাকে হবে না বোঝা
দিন শেষ করে আলো যত আঁচে নিভে আসছে, তাকে
যেন তত পেয়ে বসছে দুকথা শোনার ইচ্ছে। রোজ
দেখে দেখে হেজে যাওয়া ঘরগেরস্থালিতুতো গাছ
বলছে, কাছে থাকো। এই কাছে কি গাছের মতো কেউ?
এই কাছে কি— যে দূরে, প্রাণের ভ্রমরে রাখা তার?
রেওয়াজে বসে কে খুন ঝরাচ্ছে গলায়, তার ভরা
দরদে কত যে পালতোলা কত নৌকোডুবি। মনে
হয়, বালি স্মৃতি ঠেলে না জানি দেশের তার কোন
অজানি কোথায় আজ বেরিয়ে পড়ার ছিল। সেই
ইশারা গড়ায় অস্ত অবধি। এখনও আফ্রিকার
ফাঁকা হয়ে আসা সেই বাওবাব গাছটির মাথায়
যে তুমি উদয় অস্ত, অন্তহীন, বয়ে যাও তুমি?
দিন শেষে তুমি পাখি ফেলে যাও কার আকুলতা
তোমাকে হবে না বোঝা, শুধু এই তুক বাড়তে দিও
বেগম আখতার লাগে
কেন ভালো লাগছে না, তার দিকে তাকাতে গিয়ে বুঝি,
জীবন ফলিয়ে দেখা বাকি থেকে গেছে। কত না সহসা
জীবন শব্দটি মুখে মুখে ঘুরে কাটা পড়ে। হয়ত
জীবনের দুচার-দানা ছড়িয়েছিলে বাগানে টবে
আশা ছিল। তবু সব আশা জল করে জীবন মুহূর্তে
ঝাঁপ দেয়। চাপা পড়ে রেলের লাইনে। যত জ্বালা
মহানুভবতা সব টেনে নেয় সকালে বিকালে
ঝরে গিয়ে, তুমি থামো সেও থামে তোমাকে আড়াল
ক’রে, বলে, জীবন যে তারও তো জীবনে জগজিৎ
সাধাসাধি লাগে। কিছু বেগম আখতার লাগে। এই
তবে সহনীয় হবে, প্রশ্নের কাছে সে চিরকাল
থতমত খায় মাথা দেয় বুঝে সময় সুযোগ
মৃত জীবিতের শোক নেয়? এই প্রশ্ন চিরদিন
অধরা নিখিল, লেগে থাকে চোখে জলে ভরা দিনে
আজ ছটফটে, আজ ভালো
জ্যোৎস্নায় মালগাড়ি অব্দি মেরুন হারিয়ে ফেলছে তার
চিরদিন আছ তবু সবে জেগে ওঠার মতো শাদা
তোমার অন্তর। সেই অন্তর থেকে মিহি গুঁড়ো উড়ছে
খুব। ঝিম ধরে আসছে স্টেশন বাজার আর খোলা
শার্টের মতোই হু হু টান পড়ছে তোমার অন্দরে
চেতনার মতো গুমটি, প্রায় নিভে আসছে জ্যোৎস্না লেগে
গুমটি মালিক যেন কবেকার ফুটে ওঠা দৃশ্য
রেলগাড়ির মতোই আজ সপ্রতিভ অনর্গল
এ হৃদয়, তবু তার কামরায় লোক নেই, শুধু
যতদূর তুমি পড়ে আছ ধু ধু, যেন শতচ্ছিন্ন
গল্পের পাতাটি থেকে তাকে দেখে ফেলবার আশায়
ম্রিয়মান বাল্ব জেগে ওঠে। যত দুর্ভাবনা আজ
মেরুণ হারিয়ে ফেলা জ্যোৎস্নার গর্তে মরে পড়ে আছে।
যা কিছু ভুলচুক, আজ ছটফটে, আজ বড় ভালো