মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১, ০৪:০৩ অপরাহ্ন
মাসুদ খানের কবিতা
দমকল
উন্মাদ উঠেছে গাছে, তরতর ক’রে, ছাড়া পেয়ে পাগলাগারদ।
নামে না সে কিছুতেই, যতক্ষণ-না ওই বেঁটেখাটো নার্সটি এসে
মিনতি করে না-নামায় তাকে।
নার্স আসে দ্রুত, দমকলের মতন;
কী-কী যেন বলে হাত নেড়ে নেড়ে,
তাতে খুশি হয়ে নেমে আসে উঁচু ডাল থেকে বিমুগ্ধ পাগল–
ঝোলের উল্লাসসহ যেইভাবে কইমাছ নেমে আসে পাতে
কানকো টেনে টেনে
ক্রমিক সংখ্যার মতো সহজ স্বাচ্ছন্দ্যে।
ঝিলমিল করে বয়ে যায়, সেবিকার বোধে, পাগলের বিকল বিবেক।
উন্মাদ আবার ফিরে যাবে আজ উন্মাদ-আশ্রমে
ধর্মগণ্ডিকায় মাথা রেখে নির্বিকার নিয়ে নেবে
তেরোটি ইলেকট্রিক শক
তেরো বার স্বীকারোক্তি, স্বাস্থ্যযাজকের শান্ত সুধীর নির্দেশে।
মৌসুম
গাছগাছালিরা আবার প্রকাশ করবে পত্রপত্রিকা।
কীটাক্ষরে ছাপা হবে তাতে কথা ও কথিকা, কবিতাও…
মহোৎসব লেগে যাবে বানানভুলের, কাটাকুটি,
নিরক্ষর পাতায় পাতায়।
“আমার লাইন হয়ে যায় আঁকাবাঁকা, ভালো না হাতের লেখা…”
গাইতে গাইতে এই তো এখনই ছুটে যাচ্ছে কাঠবেড়ালির শিশুকন্যা।
তার ফোকলা দাঁতের খিলখিল হাসির হিল্লোলে
আগাম চেয়ার উল্টে পড়ে যাচ্ছে ওই
দ্যাখো সাপ্তাহিক কলাকাণ্ডের ঘোড়েল সম্পাদক।
রসিক পাঁকের মধ্যে খাবি খাচ্ছে সম্পাদনা, মৌসুমি আহ্লাদে।
অপরের ভাব ভাষা চুরি করে পাইকারি চালান দিতে গিয়ে
ধরা খেয়ে জব্দ বসে আছে বর্ণচোরা দুই চতুর চড়ুই।
শরমে স্থগিত করে দিচ্ছে পত্রপ্রকাশনা আপাতত
শতশত ধোঁকা-খাওয়া মাটি-ঝোঁকা রাংচিতা-ঝোপ,
আলাভোলা আশশেওড়ার ঝাড়।
আর ক-টা দিন পর
উড়াল কটাক্ষ ছুড়তে ছুড়তে গাছ থেকে গাছে
উড়ে যাবে উড়ুক্কু শেয়াল, গিরগিটি বহুরূপী…
আর প্রকাশিত পত্রপত্রিকা ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে বলে
দুড়দাড় গাছে উঠে পড়বে
আরোহসক্ষম বেশ কিছু বন্য বেল্লিক ছাগল।
তারা খুদে পত্রগুলি খাবে আগে।
প্রদক্ষিণ
শূন্য আর এক, এক আর শূন্য—
অবিরাম এই একেশ্বর আর নিরীশ্বরে যেন পালাক্রমিক বিশ্বাস,
মাত্র দুই অঙ্কের এই মাধব-মাধবী জলকেলি, বোঝাপড়া, নর্মলীলা…
স্রেফ এই দ্বিবীজ বিশ্বাসে, এই দ্বিরাঙ্কিক বিন্যাসেই
দ্রুত গড়ে উঠেছে সংকেতবদ্ধ এক
পরাক্রমী ডিজিটাল সিস্টেম, প্রবুদ্ধ অঙ্কতন্ত্র।
তামাম দুনিয়া জুড়ে বিছানো এ মহাকায় আন্তর্জাল, এ উপাত্তমণ্ডলের মেঘ
সবকিছু ছিঁড়ে-ফুঁড়ে ঠিকরে পড়ছে আজ
স্পষ্ট, আর কারো নয়, কেবল তোমারই স্মিত মুখের কিরণ।
তোমার পশ্চিমে প্রসন্নতা, উত্তরে প্রতিভাপ্রসাদ, দক্ষিণে লাবণ্যশ্রী,
নৈর্ঋতে স্নেহসংকেত, ঈশানে বাৎসল্যবলয়, পূর্বে মেধাসরোবর…
তোমার হিরণ্যসম কিরণের কসম, তোমাকে কেন্দ্র করে অচিরেই
ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রদক্ষিণ করতে থাকব আমি, আমরা
আর আন্তর্জালের উদ্বেল পুঞ্জমেঘ।
(পুনঃমুদ্রণ)