মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই ২০২১, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন
হাতুড়ি কাহিনি
একটা বইগ্রাফী করব। বইটা পড়া এখনও শেষ হয় নাই। কিন্তু আমি শিউর, শেষ করার পরেও আমি একই ছবিইই তুলব।
বুকগ্রাফীটার জন্য একটা হাতুড়ি দরকার। আমার জানামতে বাসায় ছোট, কিউট দেখতে একটা হাতুড়ি আছে। হাতুড়ি খুঁজতে গিয়ে জানতে পারলাম বাড়িওয়ালারা ধার নিসে। কি বিরক্তিকর! আমার এক মুড বেশিক্ষণ থাকেনা। এই বইগ্রাফী করার মুডও কখন চলে যায় সেই ভয়ে আমি নিজেই তিনতলায় বাড়িওয়ালাদের বাসায় হাজির। অন্যদের বেলায় হলে বাড়িওলার যুবক বয়সের, চাপ দাঁড়িওয়ালা, হ্যান্ডসাম টাইপ ছেলে দরজা খুলত। কিন্তু আমার বেলায় সেটা হবে কেন? আমার বাড়িওয়ালার তো যুবক বয়সের ছেলেই নাই, চাপ দাড়ি অনেক দূরের কথা।
তিনবার কলিংবেল বাজানোর পর বাড়িওয়ালাদের কাজের মেয়ে দরজা খুলল। আমাকে দেখেই বলল,” ছাদের চাবি নিতা আসছ যে?” আমি বললাম, “না।হাতুড়ি নিতে আসছি।কাজ কি শেষ হইসে? না হইলেও দাও,আমি আবার দিয়ে যাব”।অভদ্রতামি মাখানো ভদ্র কথা। “ঐটাতো খালু নিয়ে গেসে দোকানে।”
বাহ্। ভালো কথা। বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে নিজের দোকানের কাজকর্মও ভাড়াটিয়ার জিনিস দিয়ে সেরে ফেলা। আসলেই, “একটু চালাক না হইলে দুনিয়াতে টেকা মুশকিল”।
রাতে সিঁড়ির দিকে কান পেতে রাখলাম। কেউ আসার শব্দ শুনলেই দরজা খুলে দেখি। রাত ৮ থেকে এমন করে করে ১১ টা বাজালাম। বাড়িওয়ালার খবর নাই। রাতের গভীরতার এবং লজ্জা শরমের তোয়াক্কা না করে গেলাম বাড়িওয়ালার বাসায়। এবার দরজা খুলল বাড়িওয়ালার ছোট মেয়ে। হাতে টিভির রিমোট।আংকেল কোথায় জিজ্ঞেস করতেই বলল, “আব্বু তো আব্বুর এক বন্ধুকে দেখতে হাসপাতালে গেসে, আজকে আসবে না”।
ক্রাইম থ্রিলার জনরাখোর আমার মাথায় আসলো, “হাতুড়ি নিয়ে হাসপাতাল?! ব্যাপার কি?”
রাতে ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখলাম হাতুড়ি নিয়ে বাড়িওয়ালা পলাতক। আমি থানায় ডায়েরী করেছি। হাতুড়ির নিখোঁজ বিজ্ঞাপ্তি দিয়েছি। যে বান্দা হাতুড়ি সহ আসামীকে ধরিয়ে দিতে পারবে তার জন্য সম্মানী ঘোষণা করেছি।
সকালে উঠার অভ্যাস আমার নেই। দুপুরে উঠে বই পড়েই কাটিয়ে দিয়েছি সন্ধ্যা পর্যন্ত। সন্ধ্যার একটু পরে বাড়িওয়ালার গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম বাইরে।দরজা খুলে দেখি আমার হাতুড়ির আসামী। সালাম, বন্ধুর খোঁজখবর হাবিজাবির পর হাতুড়ির কথা জিজ্ঞেস করেই ফেললাম। উত্তর?” ওহ্হো ওটা তো দোকানে রেখে এসেছি।”
এর পরের ঘটনা গুলো এমন-
আংকেল পরদিন দোকানে গিয়ে আবিষ্কার করলেন, উনি দোকানের কিছু পুরোনো জিনিস বিক্রি করেছেন সাথে হাতুড়িটাও দিয়ে দিয়েছে দোকানের ছোকরা। সেই ক্রেতার ফোন নম্বর নেই। যেই ট্রাকে করে জিনিস নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেই ট্রাক ড্রাইভার কে খুঁজে বের করে ক্রেতাকে পাওয়া গেল। সাথে হাতুড়িও উদ্ধার হল। কিন্তু বাড়িওয়ালা সেটা আবার দোকানে ভুলে ফেলে আসায় আমি পেলাম আরও কিছুদিন পরে।
হাতুড়িও রেডী, আশ্চর্যজনকভাবে মুডও দিব্যি আছে। এখন ছবি তোলার পালা। কিন্তু যার ছবি তুলব সে কেথায়? মানে বইটা টেবিলের উপর নেই। তন্নতন্ন করেও পেলাম না। খুঁজতে খুঁজতে যখন দিশেহারা, তখন আমার আব্বার ফোন,” তুই বাসায় ছিলি না যে বলতে পারি নাই। ঐ যে আমার এক বন্ধু উনার মেয়েকে নিয়ে আসছিলো, তুই তখন তোর মামার বাসায়। মেয়ে বইটই পড়ে বোধহয়। টেবিলের উপর বইগুলো দেখে কয়েকটা নিতে চাইলো। না কেমনে করি। চিন্তা করিস না পড়ে আবার দিয়ে দিবে।”
বাইরে বোধহয় পড়ন্ত বিকেল।পাখিরা ঘরে ফিরে যাচ্ছে। আর আমি?হাতুড়ি নিয়ে নিজের মাথা পেটাতে।