কেউ কেউ প্রতারক ভালোবাসার পেছনে ছুটে। কেউ কেউ খুঁজে নেয় অনুভূতির ভাষায় তীব্র ভালোবাসা। পেছনের ফেলে আসা পথে ফিরতে চায় না কেউ। সামনে বিপুল পৃথিবীর কাছে ভালোবাসা চাইতে চাইতে পথ চলে মানুষ। এইসব ভালোবাসা ‘ধুলো আর কাদা’র মত মেখে মেখে বেড়ে উঠে শিশু মানুষ। পাখিরা ডানা মেলে, ঠোঁট ঘষে, ভালোবাসায়। আবার কাউকে যদি দেখা যায় স্মৃতিকাতরতায় ভুলে ভুলে পেছনের পথে হাঁটতে, তাঁকে ডেকোনা আর! তাঁর কাছে হয়তো এই-ই ভালোবাসা! 

কত রকম ভালোবাসা ছুঁয়ে দিয়েছে কত রকম গানের হৃদয়। কত রকমের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছে। কত রকমের শৃঙ্খল ভাঙার বুনিয়াদ করে দিয়েছে। কত রকমের প্রাচুর্য নিয়ে হাত পেতেছে কত গান এই ভালোবাসাকেই বুকে নিয়ে। মাঝে মাঝে নিখাদ ভালোবাসা খুঁজে নিতে পারা যায় অনেক সাদাকালো বিষণ্ণ গানে কিন্তু রঙিন অনুভবের স্নিগ্ধতা নিয়ে। সুরের মায়াজাল অবশ করে ফেলে, গায়কীর কাছে ধরা দিয়ে নারী নাকি পুরুষকন্ঠ সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে চোখ রাখতে গিয়ে হয়তো সেই গানগুলোর ব্যান্ডের নাম ধরা পরে… “সিগারেটস আফটার সেক্স’’।

এমনসব গানের ইন্দ্রধনুর কাছে আকাশ ধরা দেয়, বাতাস এলোমেলো বয়ে গিয়ে ঝড় তুলে যায়, একটু মন খারাপ কিংবা একটু হাসি, একটু কোন শরীরের কাছে শরীরের যেতে চাওয়া, মনের কাছে মনের আভাস রেখে যাওয়া – অনেক অনেক গান এমন বিচিত্র অনুভূতি জাগিয়ে বিবশ করে রাখে সময়, বিছিয়ে দেয় মহাকালের রেখা, পাতিয়ে দেয় ভালোবাসার মোহে ডোবার ছল। এমন সব গান নিয়ে ড্রিম পপ ঘরানায় এন্ড্রোজিনাস কন্ঠ নিয়ে স্বপ্ন ঝরায় – কারো কাছে যাবার, হেঁটে হেঁটে। টেক্সাস থেকে বাংলাদেশ এই সুরের দ্যুতিতে হেঁটে হেঁটে প্রেমিক খোঁজে প্রেমিকাকে, প্রেমিকা খোঁজে প্রেমিককে, অথবা, কেউ খোঁজে শুধুই অলীক অবসরের প্রেম – সিগারেট না খেয়েও, শরীরে মন মিশিয়ে সিগারেট খাবার অবসর, প্রেম, প্রেমের অবসর, অবসরের প্রেম। পায়?

“সিগারেটস আফটার সেক্স” আর “ক্রাই”—দুটা স্টুডিও এলবামের কাছে ধরে নেই আমরা অনেক ভালোবাসার পালক রাখা আছে, ফেনা ফেনা আল্ট্রামেরিন সমুদ্রের ঢেউ আছে, গোলাপি হাওয়াই মিঠাইয়ের পেলবতা আছে। ধরে নেই, স্বপ্ন নিয়ে তোমার কাছে যাওয়া যায় তাঁদের গানের সাথে সাথে, ধরে নেই, তাঁদের কাছে যাওয়া যায় তাঁদের গানের হাত ধরে, তোমার হাত ধরে। এমন বিমূর্ত ভালোবাসার সন্ধান – এই ক্যাওটিক শহুরে সন্ধ্যাগুলোয়, সকালগুলোয়, তোমাদের হাত ধরেই হয়তো হয় – গ্রেগ গঞ্জালেজ, জ্যাকব টমোস্কি, র‍্যান্ডাল মিলার আর জোশ মার্কাস! ২০০৮ সালে তোমাদের পথচলার শুরু থেকে তূরীয় আনন্দে খসে পড়ে একেকটা উজ্জ্বল তারার মত গানের লাইন, আমাদের গভীরে, শান্তস্বরে তোলপাড় করে ঘটিয়ে দেয় কিছু একটা –“Your lips, my lips, apocalypse”।

ভ্যানিটি ব্যাগে কিংবা ওয়ালেটে গত প্রেমের দেখা হবার সব টুকরো টুকরো স্মৃতি – মুভি টিকিট, থিয়েটারের টিকিট, রেস্টুরেন্টের বিল, পাতার বুননে বোনা আংটি, কিংবা, নিছক কয়েকটা চুল – নিয়ে তুমি কানে ইয়ারফোন গুঁজে শুনতে পারো ওদের গান। বিস্ময়ে গলে যাবে সব ভেতরের কাঠ, কাঠপোড়া গন্ধ, গন্ধে মাতাল ফুল, ফুলের পাপড়িতে ভেজা জল, জলে সিক্ত গাল, গালে তোমার ঠান্ডা হাত, হাতের উপর নিমিষে বয়ে যাওয়া বাতাস… বাসের জানালা দিয়ে আসা বাতাস। বিশ্বাস করো, “সিগারেটস আফটার সেক্স”র গানে তোমার এমন একটা অনুভূতি হতেই পারে, বিশ্বাস করতে পারো, এই বিশ্বাসের নামই ভালোবাসা, এই ভালোবাসাটুকু নিয়েই ওদের কারবার।

বিশ্বাস রাখো ভালোবাসায়। বিশ্বাস রাখো “সিগারেটস আফটার সেক্স”র গানে। ওঁদের গান তোমাকে ডুবিয়ে দেবেই তোমার মাঝে, তোমার শরীরে, তোমার মনে, তোমার মননে, যেখানে অন্য কারো বা অনেকের বসবাস থাকলেও থাকতে পারে একইরকম বিশ্বাসে, ভালোবাসায়, প্রতারণায়, অনুভবে, দুঃখে, সুখে, পরিপূর্ণ কোন আলোআঁধারি চেতনায়। থেকো।