মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১, ০৫:২৮ অপরাহ্ন
রুমীয়া রুমীর কবিতা
কবে যে হায় দেখতে পাবো
ভোরের মত সহজ করে আসতে পারো
নরম কিন্তু বুকের মধ্যে তেজ লুকানো
প্রখর কিংবা মেঘলা দুপুর
এক ঝলকে জানিয়ে দিয়ে
ভোরের মত সহজ করে
আসতে পারো লেখার খাতায়
গর্বে আমার বুক ভরে যায়
কিন্তু ক’দিন কোথায় গেছ
হঠাৎ করে লেখা ছেড়ে
অন্ধ কুয়ায় পিছলে পড়ে
প্রতিটাক্ষণ ভাবছি বসে
ঐ যেখানে মৃত্যুপুরী সেখান থেকে
পালিয়ে তোমার আসতে আরও কত দেরি?
ভোরের মত সহজ করে আসতে পারো হঠাৎ করেই
বুকের মধ্যে মৃত্যুভয় যে তোমার নেই
তা তো জানিই। এও তো জানি
তুমি ভীষণ ভয়ে আছো
নতুন জীবন হাতে নিয়েই
ভোরের মত সহজ করে আসতে পারো জীবনসহ
কবে যে হায় দেখতে পাবো
অন্ধ হওয়ার আগে তোমায়
একটিবার আসতে পারো
ভোরের মত সহজ করে বুকের মধ্যে
নিজের ভেতরে গিয়ে বহুদিন দেখি না নিজেকে
তুমি চাইলে আমার গরম ভাতে
পানি ঢেলে দিতে পারো
হয়তো সামান্যই রাগারাগি হবে তাতে।
তুমি চাইলে আমার ভাত কেড়ে নিতে পারো
হয়তো ভাতের খিদায়
ভিক্ষা করবো আমি ফুটপাতে- এ
অভিযোগ কার কাছে জানাবো?
তুমি চাইলে নিতে পারো আমার ঘরও
আমি রাস্তায় ঘুমাব
মাঝরাতে পুলিশের মার খাব
ঠিকানা অদল বদল হবে হত্যা ও ভয়ে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যাবে
চিৎকার আর ভয়ংকর গুলির শব্দে
তুমি চাইলে মেয়েটাও ফিরবে না ঘরে
সন্ধ্যার পরে কারা যেন ধর্ষণ করে
রেখে যাবে অন্ধকার গলির মোড়ে
আমার সন্তান যেন নিরাপদে থাকে
কার কাছে আমি এই ফরিয়াদ জানাবো?
তুমি চাইলে নেশাখোর হয়ে যাবে
আদরের ছেলেটাও দুর্দিনে একা
ভুলে ভুলে ভরে যাবে তার সব খাতা।
তুমি চাইলে গলির বিড়ালটাও
গরম পানিতে পুড়ে যাবে আচমকা!
মিঁউ মিঁউ ছাড়া তবু বলবে না কিছুই
তুমি চাইলে নিরীহ গাছটাও কেটে নিতে পারো
কাটাকাটি সব মন ছাড়া বনে আসে না একবারও
তুমি চাইলে ধ্বংসযজ্ঞ থেকে
ওঠে এসে শোনাবো বেরহম সব কথা
তুমি কি বলবে এসব অথবা
এরচেয়ে ভয়ঙ্কর কোন চাওয়া
কখনো পোষোনি তুমি মনে, একবারও?
বড়ো ভালো হত, যদি
যে চেয়েছে সে তাকাতো নিজের দিকে
ভয়ঙ্করের ভেতর থেকে অনুতাপের মত।
কাফেলা
সময় প্রাক্তন রাজধানী
কখনো বুকে থেকে
কখনো বা গ্রামে থেকে
আমি তার কুলুকুলু
বয়ানের ঢেউ গুনি
সময় প্রাক্তন রাজধানী
প্রতিদিন সেইখানে
কাজে যেতে দেরি হয়ে যায়
কথা দিয়ে কথা রাখা দায়
সময় থাকে না কারো মুঠোর ভেতরে
যেভাবেই ধরো তাকে
শক্ত বা আলগা করে
গ’লে গ’লে পড়ে যাবে
‘ঢালি এঁকে গেছে
সময় প্রাক্তন রাজধানী
আমি দেখেছি তাকে
বড়োই বিষন্ন সে
বুকে ঝিমঝিম করে
ব্ল্যাকহৌল ঢুকে পড়ে বুকের গভীরে
সময় প্রাক্তন রাজধানী
আমি দেখেছি তাকে
দেখার দূরত্ব আমাদেরই মতো
যতটুকু সরে যাবে, চলে যাবে অতীতে
অথবা কল্পনায় এঁকে
বিস্তৃত করে দিতে পারি
মনের পাখিটির ডানা
যতটুকু পারি অসীমের সীমানাতে
সময় প্রাক্তন রাজধানী
হয়তো ফুটে আকুল
হয়ে আছে ফুল
তোমার তাকানোর মত নেই অবসর
আরও বড়ো কারবারে
যেতে হবে এই ভবে
বাঁচার জন্য খুঁজে, যা যা লাগে
আনতে আনতে সেসব
চলে যাবে বিস্তর সময়
মাঝপথে চলে যাবে একা একা নীরবে
যেভাবে মানুষ যায় পৃথিবীকে ছেড়ে
তুমি যাবে, আমিও যাবো
ভেবে মন ভার হয়ে আসে
সময়, মনে রেখো
একা তুমি ভাবছো যতোটা
ততটা একা তুমি ছিলে না কখনো
আমিও ছিলাম এই মানবজন্মে মিশে
তোমার কাফেলাতে…