মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
মৃদুল মাহবুবের কবিতা
এই সরল পথ
১.
উটের পা কম্পমান, তপ্ত মরুতে হাওয়ায় জ্বলছে অদৃশ্য আগুন, সে চলেছে মদিনার পানে, কাঁটা বিছানো পথ দিয়ে, পিঠে বয়ে নিয়ে চলেছে হাজারো পুস্তকের জ্ঞানের তরল নির্যাস ও পিপাসা। এই জ্ঞান-তরলের রক্ষক একটা গাধা যারা সকল দাঁত খুলে পড়ে গিয়েছে চোয়াল থেকে শাসকের সামনে হাসতে হাসতে। দাঁতহীন প্রাণীদের সুবিধা হলো তাদের দাঁতে কোন ব্যথা নাই, হাড়হীন প্রাণীদের সুবিধা হলো যে-কোন কিছুর সাথে পেঁচিয়ে রক্ষা করতে পারে নিজেকে। উটের গ্রীবার নিস্তব্ধতায় জ্ঞানের নির্যাস নিয়ে ধাবমান গাধার পিছে লেগেছে বৈরাগী মরু হায়েনা। তরলে মিশে থাকা জ্ঞান সুধা তারা চায় না। তারা চায় মাংস ও আমিষ, মরু শীতে উষ্ণতা। মরু হায়েনারা জ্ঞানের বাহক গাধার হৃদপিণ্ডের ভেতর লুকানো তাদের আয়ু ফিরে পেতে চায়। তারা বদলে নিয়েছে দেহ, মেরুদণ্ডহীন মাংসের বলের ভেতর জন্ম নিয়েছে শিরদাঁড়া, পশু জগতের সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট, বদল হতে হতে, বদল হতে হতে, রূপান্তরিত হতে আজ শাসনদণ্ড হাতে নিয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে, বুড়ো চাঁদ করে দিয়েছে বেনোজল পার। যে শাসক যত জ্ঞানীর রক্ত পান করতে পারবে সে তত শক্তিশালী শাসক, সে অত অদৃশ্য ঈশ্বর হয়ে নিজেই নিজের মূর্তি স্থাপন করতে পারে পথে পথে। এই সমস্ত বুভুক্ষু মরু হায়েনারাই মানুষের আমিষ খেতে খেতে হয়ে উঠেছে মানুষ। হাজার বছরের মমি জীবন ফেরত পেতে পান করে মানুষের আত্মা, রক্ত, হৃদয় ও হাড়হাড্ডি। দ্য গ্রেট মামি রিটার্নস। পর্দা খুলুন, মমির মুক্খা খুলুন, পানিতে মিশে যাওয়া সেই ইতিহাসের বইয়ের ফাঁকা পৃষ্ঠাগুলো পড়তে এই মহাকালের সরোবরের পানিতে ডুব দিয়ে দেখুন রক্ত প্রবাহের ঝিম মিহি শব্দ, মগজের ভেতর ছুটে চলা রক্তের ঘর্ষণে ব্যথায় মাথা ছিঁড়ে যাচ্ছে, চোখ তুলে দেখা যাচ্ছে না ইতিহাস। দেখুন, যে শাসক যত জ্ঞানীর রক্ত পান করতে পারে সে তত শক্তিশালী শাসক। ফলে, শাসনকার্য শক্তিশালী করার জন্য গরুর খামারের মত জ্ঞানীর খামার লাগবে আমাদের। কী যে শীতল নিরীহ এক প্রাণী গরু যার সমগ্র চোখ জুড়ে মায়া। রাষ্ট্র নামক মন্দিরে তাদের বলিদানের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র আরো পোক্ত মেশিন হয়ে উঠবে, রাষ্ট্রকর্তৃক যে মানুষ বলিদান কর্মসূচি যেখানে সাধুর সাথে চোরের বুকের ভেতর পুঁতে দেওয়া হয়েছে বনবরইয়ের পবিত্র গাছ। এখানে বুদ্ধিজীবীতার অনেক স্কুল খোলা হয়েছে রাষ্ট্রের নিচে উৎসর্গ করার জন্য। শাসকের পোল্ট্রিতে জ্ঞানের মুরগীর ওজন বাড়ছে আর বাড়ছে দিন দিন। রাষ্ট্রের পুলিশবাহিনীর সাথে সাথে বেড়ে চলে বুদ্ধিবাহিনী। চারপাশে তাকান। গৃহপালিত গরুদের হাম্বারবে পাশ ফেলে শাসক আজ আল্লার কাছে প্রার্থনারত। আলিফ, লাম, মিম—এর কোন ব্যাখ্যা চেয়ো না হে মানুষ।
আর আমাদের অমরত্বের বাসনা ব্যাপক। অমরত্ব সংক্রান্ত সকল যোগব্যায়াম ও বিশ্বাস আমরা করি। অমরত্ব চাই আমাদের যে কোন মূল্যে। এই জন্য আমরা জীবিত অবস্থায় আমাদের আত্মা ও মনকে ভার্চ্যুয়াল মেশিনে প্রতিস্থাপন করেছি। বাস্তবতায় আমি আর কোথাও নেই। আমার ভার্চ্যুয়াল চরিত্রটি সকলে চেনে। আমি বলে কোন ব্যক্তি নাই এই দুনিয়ায়। জীবিত অবস্থায় স্বর্গ নরকের দ্বার পার হয়ে পৌঁছে গেছি অমরত্বের দেশে। পুলসিরাতের সময় পাহারাদার ফেরেস্তাদের শুধু আমি জানিয়েছি আমার একটা রক্তমাংসের মানবজীবন ছিলো দুনিয়ায়। শেষ বিচারের দিন আমাকে দোযখ আর বেহেস্তের বাইরে রাখা হয়েছে যেহেতু জীবিত অবস্থায় আমি যে পাপ, পুণ্য, ভালো ও মন্দ কাজ করেছি সবই আমার ভার্চ্যুয়াল চরিত্রটি করেছে। সে এখনো বসে আছে মেশিনের কোডের ভেতর। আমি যে সার্ভারে রক্ষিত তা নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে থিয়োরেটিক্যালি হিডেন। আমি যে ডট কমে রেজিস্টার্ড তা কেয়ামতেও ধ্বংস হবে না বলে তাদের কর্পোরেটশর্তে লেখা ছিলো। আমি ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে থেকে এসে দেখে গিয়েছি আমার মৃতদেহ, আড়বাঁশিতে রাগ হংসধ্বনি বাজানোর পর আমি অসীম থেকে দেখতে এসেছিলাম কেয়ামত সে কেয়ামত। আমি নিজেকে পার হতে দেখেছি পুলসিরাতের সরু মায়াবী ব্রীজ। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ‘কেয়ামতকে অস্বীকার করো না।’
সুদূর থেকে এই যে আমার আলো-ছায়া খেলা তোমার সাথে, প্রভু! আমি বসে আছি থিয়োর্যাটিক্যালি হিডেন ব্রহ্মাণ্ডে ঈশ্বরের করতলের বাইরে। যিনি ভার্চ্যুয়াল দুনিয়ায় অবিশ্বাসী মানুষদের লুকানোর জন্য এই নতুন ব্রহ্মাণ্ড তৈরি করেছেন, তিনিও জানেন না এর অবস্থান কোথায়, এতোই প্রবল প্রাইভেসি, নিরাপত্তা। মহাধ্বংসের পরও তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু স্বর্গ ও নরকের বাইরে একরামুলের মৃত্যুর আগের আহা শব্দটা শোনা যায়, তার মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে কবরের পাড়ে সুরা ফাতেহা, বনবরইয়ের ছায়ায়। যা সৃষ্টি হয়েছে স্রষ্টার অগোচরে তিনিও তার মালিক। তিনি সবই জানেন? লুকানো মেশিনে জীবিত ভার্চ্যুয়াল মানুষের বিচারের কি বিধান লেখা আছে তোমার শূন্য পৃষ্ঠায়।
তুমি যে নিঃসঙ্গ
সে-কথা বলতে পারছো না
কাউকে,
কাউকে।
আমি আশায় বসে আছি কবে দুনিয়া মেশিনের দখলে যাবে,
আমি সত্যিই চাই ফুল যন্ত্র হয়ে ফুটে উঠুক ধাতুর ডালে ডালে।
আমি চাঁদের বায়ুশূন্যতায় শ্বাস নিতে চাই ন্যানো ফুসফুস দিয়ে,
মানুষের চেয়ে অধিক অনুভূতিশীল মেশিন পাওয়া যাবে কবে?
কবে রোবট জৈব মানুষের মত কথা বলবে,
ডগি বা সিক্সটি-নাইন সকলই যে জানে,
তার বুকের ভেতর বৃষ্টি ও প্রোগ্রামড কোড,
চার দেওয়াল, স্কুল কলেজ, ওয়ার্কশপ, ধর্মগুরু, কামগুরু,
মনোবিদের ইজিচেয়ারে বসতে বসতে দিন চলে যাচ্ছে আমাদের,
মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না,
গোসল করতে করতে, খেতে খেতে,
অপর ও নিজেকে বুঝতে বুঝতে দিন চলে গেল,
আমি শুধু শুতে পারি না ক্লান্ত দিনের পর, যায় দিন,
দেহের চামড়ার পোষাক খুলে, যায় দিন,
শুধু রক্ত হয়ে আমি ঢুকে যেতে চাই, যায় দিন,
অনন্ত তোমার রক্ত সমুদ্রে, মাসিকের রক্তভেজা কুসুম ও ডিমে, লবণে,
তোমার পালকের বুকে খুঁড়ে তৈরি কূপের ভেতর আমি ধ্যানমগ্ন হতে পারলাম কই আর, যায় দিন,
শুধু রক্ত ভেসে যায়, রক্ত উড়ে যায়,
সত্যিই আমি আজ চাই মেশিন-মানুষ তোমার পরিবর্তে,
আমি শুতে পারি না ক্লান্তির পর,
আমি শুতে পারি না কালচারের নিম্নচাপে,
মিহি মেশিনের গিয়ার, পুলি, পিষ্টনের হৃদয়,
পিচ্ছিল নরম সিরামিক পাছা,
যার বুকের ভেতর অনুতাপ শুষে নেওয়ায় চোষযন্ত্র,
তার মেশিনের দেহের ভেতর মাংসের থার্মোমিটার ঠেলে দিয়ে
দেখে নিবো তার ভীষণ জ্বর আজ, বমি বমি ভাব, মাথাব্যথা।
মেশিন ঠিক বুঝে নিবে আমি তালুতে রেখেছি লেবুপাতা
যেনো না ওঠে নারীরোবটের বমির দমকা।
আমার যায় যায় দিন, প্রতিটা দিন।
প্রভু, প্রতিটা বিচলিত জীবন্ত প্রাণ হসপিটালের নার্সের মত ছুটে যাচ্ছে কাউকে বাঁচাবে বলে সমাজের কোরিডোর দিয়ে, মানুষের রক্ত, মাংস, দেহ ও বকুলের গন্ধ ও অনুভূতির চাপ, ক্ষতের সেবা অসহ্য লাগতে পারে কোন কোন দিন।
প্রভু, আমি চাই কথা বলা সেক্সডল,
মেশিনে যার হৃদয় লেখা আছে কোডে,
আমাকে দিও অলৌকিক গুলিহীন পিস্তল,
নিজের মাথায় ঠেকিয়ে ধ্যানে বসবো তোমার বুকের কুয়ায়,
ধ্যান করতে করতে,
মিরাকেলে নিজেই গুলি হয়ে উঠবো,
ফেটে পড়বো নিজের ভেতর বনবরইয়ের পিতলের বিচি হয়ে।
প্রভু, আমি আশায় বসে আছি কবে দুনিয়া মেশিনের দখলে যাবে!
যখন আমার পায়ের চিহ্নও নিখোঁজ এই বাটে,
যখন আমি নিখোঁজ এই ঘাটে,
যখন দেশে দেশে,
যখন উর্দির ভেতর থেকে বাঘ পৌষের কুয়াশায়
পাপী, তাপী, আতঙ্কবাদীদের গাল চাটে,
যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই ঘাটে,
তখন আমায় নাই বা মনে রাখলে।
যখন দেশ থেকে অগণন প্রাণ জ্বিন হয়ে অদৃশ্য হয়ে গেছে
তখন তাদের কে মনে রেখেছে এই ঘাটে, বাটে, রবীন্দ্র-সংস্কৃতির অসভ্যতার ভেতর,
যখন মাদার গাছের উঁচু উঁচু ডালে কে বসিছে আজি আমাদের নষ্ট হৃদয়াকাশে।
চুকেছে সকল বেচা কেনা,
মিটেছে সকল লেনা দেনা,
বন্ধ, নিষিদ্ধ আনাগোনা এই ভুবনের হাটে—
তখন আমাদের ভুলে যেয়ো,
আজি তারার পানে চেয়ে চেয়ে কিচ্ছু দেখার নেই আর ।
কোন প্রভাত বা দিবস বা সুবেহ সাদিক বা রাত্রি, কোথাও নেই আমি।
সকল খেলা আমি খেলিছি ভার্চ্যুয়ালি— আহা,
খেলিছি এ বিশ্ব লয়ে,
অতীব শিশু আনমনে
ভার্চ্যুয়ালি,
সকলই আজ পুতুলখেলা।
আসব যাব চিরদিনের এই অনন্ত অমর আমি।
কিছু আর আসে যায় না আমার তোমাদের মনে রাখা বা না রাখায়।
তারার পানে চেয়ে চেয়ে এই দুনিয়াদারীর কথা ভুলে অমর হওয়া চাই।
ভার্চ্যুয়ালি দুনিয়ার সকল প্রভাত, দিবস, সুবেহ সাদিক, রাত্রিতে আমি থাকবো, থাকবোই। আমার মরণ নেই।
মৃত্যুই ডেকে আনে আমাদের অমরত্ব। আমি জীবদ্দশায় অমরত্ব পেয়েছি মেশিনের সুষমার ভেতর।
আমিই অবতার, কালোকৃষ্ণ। আমার প্রাণের নির্যাস মেশিনে ঢোকানো। এই ভার্চ্যুয়াল মানুষটার খেতে হয় না, ঘুমাতে হয় না, সেক্স করতে হয় না, অফিস যেতে হয় না, দাঁড়ি কামাতে হয় না, বাজারে গিয়ে মাছ কিনতে হয় না, নীতির সাথে আপোষ করতে হয় না, আবহাওয়া বা দ্রব্যমূল্য নিয়ে হাহুতাশ করতে হয় না, সম্পর্কের কোন দায় নিতে হয় না, এমনকি নিঃশ্বাসও নিতে হয় না। সবচেয়ে বড় কথা তাকে কিছু ভাবতে হয় না। সে থাকে নিরাপদে ব্রহ্মাণ্ডের বাইরে, অদৃশ্য অশরীরকে নিয়ে মহাশূন্যে ভাসমান স্পেসশিপে আমি তুলে নিয়েছি দুনিয়ার জোড়ায় জোড়ায় মৌল কণা ও প্রতিকণা, যেন আদি দুনিয়ায় নুহের প্লাবনে দুনিয়া থেকে জোড়া হারানো যে পাখিটি উঠেছিলো, সে জাহাজের মাস্তুলে বসে গাইছে অনন্ত বিরহের সুর। বনের পাখির কোডেড গান কে মনে রাখে স্পেসশাটলে? আর আমাকে কিছু লিখতেও হয় না। অন্য কেউ লিখে দিচ্ছে জীবন। আমি এক গোপন কোড, যন্ত্রে যার প্রাণভ্রমরা লিখিত। সে এক ফেটিশ অবজেক্ট এখানে, যাকে দেখলে মানুষের ভেতর আমার নাম, মুখচ্ছবি জাগ্রত হয়। কবরে শুয়ে বা দুনিয়ায় হাজার মাইল ধরে পথ হাঁটতে হাঁটতে আমি জেগে উঠি নিঃসঙ্গতায়, আলোর মিছিলে। জ্ঞানের তসবি গলায় আল্লার নামে শুয়ে আছি বাসনার সবুজ ঘাসের ওপর, পিঠ চুলকায়, উঠে বসে দেখি বিশাল সাভানায় নিঃসঙ্গ পশুরা বিশ্রামরত। প্রেমিকার তিনদিন আগে কাটা ধারালো পিউবিক হেয়ারের ঘষায় আমার অস্বস্তি বোধ হতে থাকে অস্তিত্ব ঘিরে, শরীরকে ঘৃণা হতে থাকে, শরীরে সবুজ বেতের কাঁটা জন্মাতে থাকে, অস্তিত্ব ভারী হতে থাকে, আমি মাটি ভেদ করে রসাতলে লাভার নদীর কিনারায় রাবীন্দ্রিক সূর্যান্ত দেখেছি। এই অনুভূতি জীবনকে এতোটাই পারদের মত ভারী করে তোলে যে আমি পালাতে থাকি নিজের থেকে নিজে, তোমার শরীর থেকে আমি বের হয়ে আসি করুণ সন্ন্যাসী, বোধিদ্রুমের নিচে ধ্যানগ্রস্ত, আমিই তথাগত। দুনিয়ার সব জানাজা বন্ধ করে দাও। জীবিত মানুষতো বিদেহী। তাকে হত্যাতে কোন পাপ নেই, যেমন একটা জীবন্ত পাথরকে নদী থেকে তুলে ভেঙে ফেললে কী বা আসে যায় নক্ষত্রের নিচে, নাই বা আমায় ভাবলে, নীতির পানে চেয়ে চেয়ে নাইবা পাপবোধ করলে আমাকে হত্যা করার পর। সে এক পাথরইতো মহানন্দার স্রোতে লুকানো। নাই বা আমায় ভাবলে। দুনিয়ার সকল জানাজা বন্ধ করে দাও।
২.
লেফট রাইট লেফট রাইট
মাদারফাকিং অলসো রাইট
লেফট রাইট লেফট রাইট।
আমরা সকলে মাস্ট বি রাইট।
পিতা ছাড়া জন্মানো শিশু
আছে লক্ষ বেজন্মা যিশু।
লেফট রাইট লেফট রাইট
মাদারফাকিং অলসো রাইট।
বাপছাড়া ইদিপাস,
নাই মূল্য ছাইপাশ,
মায়ের সাথে শোয়ায় বারণ,
মানার নেই তেমন কারণ।
বাপছাড়া ইদিপাস,
নাই মূল্য ছাইপাশ,
মা-ও হয়ে ওঠে মাগী
আগলি আগলি ছি ছি ট্র্যাজেডি
ডিস্কোবারে নাচে মক্ষীরাণী,
আগলি আগলি এ হলো যুগের কমেডি।
এই দেখে লিঙ্গ ও হৃদয় আমার বাড়ে
রাত্রির ঘনতর অদ্ভুত আঁধারে,
আমি হতেছি ব্যাপক আলাদা,
মোড়ের দোকানে খাই রংচা ও আদা।
ইদিপাস জটিলতা,
তার নেই সফলতা,
ইদিপাস জটিলতা,
মাত্র ধ্বসে যাওয়া নীতিকথা।
ছেলে বাপকে ডাকে শালা বলে
প্যান্ট খোলা ও খেলা একত্রে চলে,
মা কিংবা মেয়েতে নাই অরুচি
অন্ধকারে ধরি এ কার সুপক্ব বিচি,
লেফট রাইট লেফট রাইট
মাদারফাকিং অলসো রাইট
লেফট রাইট লেফট রাইট।
আমারা সকলে মাস্ট বি রাইট।
রাষ্ট্র আবিষ্কার করলো যেখানে পুত্রের কোন পিতা নাই, যেখানে পুরুষ সন্তানটি যিশু, সেখানে মাদারফাকিং ভ্যালিড। ইদিপাস যদি পিতাহীন পুরুষ হয় তবে ট্র্যাডেডি আর ট্র্যাজেডি থাকে না, কমেডি হয়ে ওঠে। পুত্রের প্লেজার প্রিন্সিপালের মধ্যে নগ্ন মায়েরা গণিকার মত শুয়ে থাকে আজ। এর নামই শালা রাজনীতি, সমাজচেতনা, বিপ্লব।
লেফট রাইট লেফট রাইট
মাদারফাকিং অলসো রাইট
লেফট রাইট লেফট রাইট।
সমাজে আমারা সকলে হাইড।
ফ্যাশনে পোষাকে শরীর ব্রাইট।
লেফট রাইট লেফট রাইট
মাল হচ্ছে না সময়ে আউট,
অসহ্য লাগেছে সেক্সের ফাইট,
লেফট রাইট লেফট রাইট,
মাদারফাকিং অলসো রাইট।
৩.
আজ বসন্তের হাওয়া বয়ে যাচ্ছে বনে। আমি নৈর্ব্যক্তিকভাবে, অতি নিরপেক্ষভাবে ভাত খাওয়ার চেষ্টা করছি। প্লেটে সাজানো কাঁটাহীন ভাজা মাছটি উল্টে খাবো না আজ, পাছে আমাকে কোন দলের কতারে ফেলে দাও, পাছে আমাকে দলীয় প্রোপাগান্ডার মেশিন বানিয়ে দাও, পাছে আমি সরকারী বা বিরোধীদলকে সার্ভ করে ফেলি চিন্তার পিচ্ছিল পা ফসকানো ফাঁদে, পাছে আমার ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, এই ভয়ে আমি অতি নিরপেক্ষভাবে সাদা ভাত ও জ্ঞান-তোতাদের জন্য বরাদ্দ ছোলা ও সুপক্ব তেলাকুচা ফল খেতে থাকি, রোজ জিমে যাই বহু দিন বাঁচার প্রত্যাশায়, কালো জিরার তেল খাই, মাইন্ডফুলনেসের ট্রেনিং করি, নিরিবিলি হলে কামসূত্র দেখে ভাবি এতো পদ্ধতিতে সেক্স করা অসম্ভব! তবু কাম-শিক্ষয়িত্রীর শরীর ও শিৎকারের উচ্চাঙ্গ ভঙ্গিমা কী যে ভালো লাগে, মানসিক-স্বাস্থ্য তথ্য কিনছি ডলারে, জায়নামাজে দাঁড়ানো কমবয়সী মেয়েদের অল্প অল্প শরীরের আধ্যাত্মিক ঘ্রাণে মনে হয় চিড়িয়াখানার ওপারে আটকানো হরিণী, বন্দুক থাকলেও শিকার করা আইনত দণ্ডনীয়। মেডিটেশনের সময় আমি চলে যেতে চাই হরিণ-ফার্মে, তাদের কস্তৌভ ঘ্রাণে আমি বেলুনের মত ফুলতে ফুলতে ফেটে ছড়িয়ে পড়ি রক্ত-মাংসে, তাদের পেশিতে, হাড়ে ও মজ্জায়, হরিণীর পাছা ও দুধে।
শয়তান চায় না ধর্মগ্রন্থ পড়া হোক,
খুলে ধরে আদিপর্ণ।
শয়তান চায় না যে-শিশুটি দারোয়ান হতে চায় সে যেনো হতে না পারে দারোয়ান,
শয়তান চায় না আমি সুস্বাস্থ্যে থাকি, রোজ সকালে হাঁটি,
খুলে ধরে আনন্দের মুকখা ও পিনিক।
শয়তান চায় না দারোয়ান না ভাঙুক সেই শিশুটির হাড়, মজ্জা,
কোরবানির গুরুর মাংস চুরির অপরাধে ধর্ম বইয়ের নীতির শিক্ষা দিতে,
শয়তান চায় না লোকে মসজিদে যাক, আল্লা আল্লা করুক,
শয়তান চায় না দীনের দাওয়াত,
খুলে ধরে নায়িকার শাড়ি, নাভী ও ল্যাম্ব কাবাবের নরম ভাঁজ ।
শয়তান চায় শিশুটির ভাঙা হাত ব্যান্ডেজ করা হোক
সরকারী হাসপাতালে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সন্ধ্যায়,
শয়তান চায় না ধর্মগ্রন্থ পড়া হোক,
খুলে ধরে আদিপর্ণ।
শয়তানের সকল ইচ্ছা পূরণ হওয়ার পরও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, নীতিবাদী দার্শনিকদের বিদ্যালয় থেকে লোক সরানো যাচ্ছে না, লম্বা লাইন। রামকৃষ্ণ থেকে অধুনা মোটিভেশনাল স্পিকার সকলেই সুখের ব্যাপারি।
‘তুমিই পারবে!’
আমি বাল কিছুই হতে চাই না।
ইদুল আযহার আগে গরুর ট্রাক যেভাবে ছুটে যায় পশু, মেশিন ও মানুষ নিয়ে সেভাবেই মানব-দর্শন-মন-অর্থনীতি উন্নয়নকর্মীরা চলে এসেছে ঘরে ঘরে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মত। আর শুক্রবারের নামাজ মসজিদ ছাড়িয়ে রাজপথে চলে এসেছে। ছায়ানটের ভেতরে এতো এতো সংস্কৃতির বিদ্যার্থী যে বাইরে তাদের গাড়ির ওজনে ধানমন্ডি দুনিয়ায় রসাতলে নেমে যেতে চাইছে বর্ষায় সন্ধ্যায়, আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার, উহু, অসহ্য কালচারের চাপ। ফাক ইউ, চলে যাও, যেতে চাচ্ছো যাও, তোমার ‘যেতে নাহি দিবো’র রবীন্দ্র সংস্কৃতিকে আমি পা ফাঁক করে লাগিয়ে দেবো পুট করে, চলে যায়, কালচারের চাপ নিতে পারছি না আমি, আমাকে যেতে হবে মনোবিদের বাড়ি তোমাদের ভেতর তোমাদের মত হয়ে থাকার জন্য, আমি বরং এলএসডি খেয়ে তোমার জন্মের মুহূর্ত দেখবো, তোমার মায়ের উলঙ্গ দুই পায়ের ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসছো তুমি কাঁদতে কাঁদতে, তীব্র নেশার ঘোরের ভেতর আমি তোমার বাপের শুক্রাণুও দেখবো ছুটে যাচ্ছে অনিচ্ছার এক কুসুমের দিকে, তুমি চলে যাও, আমি নিতে পারছি না ধর্ম আর কালচারের চাপ এই বর্ষার সন্ধ্যায়। লেটস ফাক বেবি, লেটস ফাক উইদাউট কন্ডিশন। তোমাদের ধর্মগ্রন্থ আর ছায়ানট থেকে পাঠিয়ো না বার্তা আমায়। আমি নিজেই লিখে নিবো আমার জীবন। হে নুরে হযরত, ও তথাগত এলএসডির ঘোরে আমি তার মাংসে কূপ খুঁড়তে খুঁড়তে ঢুকে ধ্যানে বসেছি, কী যে যাতনা দেহ খুঁড়ে কূপ তৈরি করার, কী যে যাতনা তার শরীরে মরমী কূপ খুঁড়তে দেওয়ার, আমি দেখতে পাচ্ছি প্রেমিকাদের নগ্ন মাকে, দেখতে পাচ্ছি সেই ডিম ও কুসুম। কী রস বিভঙ্গ, নৃত্যকর্মী পুরুষদের দেহে জেগে উঠেছে নারীচিহ্ন, কণ্ঠস্বরও বদলে যাচ্ছে। আমাকে চাপ দিয়ো না ধর্মগ্রন্থের, নীতির আর সংস্কৃতির।
এতো কিছুর পরও শয়তান তাড়ানো যাচ্ছে না।
খুলে ধরে আদিপর্ণ।