মঙ্গলবার, ৩০ মার্চ ২০২১, ০৭:১৭ অপরাহ্ন
শ্বেতা শতাব্দী এষ-এর কবিতা
শীতের কবিতা
(১)
শহর থেকে উধাও হয়েছে সমস্ত পোস্টার—
কোথাও যেতে চাইলে কালো বেড়ালেরা
রাস্তা কেটে নেয়।
বাড়ি ভর্তি ফার্নিচারে চাপা পড়েছে মেহগনির বন।
হেমন্তে কাটা ধানের ক্ষেতে নেমে আসে
মুদ্রার মৌসুম।
পোষা পাখিটাও গান গায় ঝন ঝন ঝন!
(২)
আঙুলের ফাঁক গলে পড়ে যায় সমুদ্র—
আমাদের যাওয়ার কথা ছিল শীতের বেইসক্যাম্পে
পায়ের কাছে বসে থাকে সন্ন্যাসী দিন
দিনের পিঠে সাওয়ারি করে ধূর্ত চিল
আকাশ থেকে মুছে দেয় পাখিদের ঋণ।
(৩)
রাস্তা তো নিজে যাচ্ছে না
আমিই হারিয়ে ফেলছি পা
চোখ থেকে চশমার দূরত্বে
মুছে যায় দৃশ্য—
সারাজীবন এমনই অন্ধ স্রোতে
নদীর চলাচল
আর তোমারা বেড়াতে যাও
শীতের পাহাড়ে
সূর্যাস্তে হেসে ওঠে লাল কার্ডিগান
তবু সত্যিই কেউ
কোথাও যাচ্ছে না
কুয়াশার পর খুব বৃষ্টি আসে
বৃষ্টির ভেতরে জল নেই কোনো!
(৪)
অথচ জলের ভেতরেই ঘুমিয়ে ছিল সে—
স্বপ্নভরা কুয়াশায় চলে যাচ্ছে শাদাসূর্যের ট্রেন
পাতার ফাঁক গলে আলো রক্তের মতো ভাসে
ফ্যাকাসে দৃষ্টি আশ্চর্য তাকিয়ে থাকে
কী স্তব্ধ! কী নীল আকাশ!
কী অর্থ বহন করে ঘুমে ভরা মুখ
সে সব জানবার প্রতিশ্রুতি দেইনি কারো কাছে
সাঁকোর বুকে জমা ছিল সমস্ত উত্তর
তবু সন্ধ্যার আগে নিহিত প্রশ্নের অসুখ থেমে গেছে
বুঝেছি সব নদী যায় একই দিকে
বিভিন্ন পথ আর বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাত
বিদ্যুৎসমুদ্র আঁকে অস্পষ্ট হাতের রেখায়—
যেন প্রচণ্ড নিদ্রার স্রোতে ভেঙে যায় সাবলীল
সব কারাগার! সব কাজ!
(৫)
শেষ হলো চিৎকার, দীর্ঘশ্বাসের ঋতু নেমে এলো পৃথিবীতে—
এই শীতে আমরা কি গাইবো জাহাজীদের গান!
কে আর আসবে ফিরে পাতাদের ঝরে যাওয়া বনে!
তবু তুমি মনে রেখো কামরাঙাফুলের হৃদয়—
মলিন দিনের পরে সন্ধ্যা তারাদের সময় আসুক তাড়াতাড়ি
দূরে, ছায়া ও আলোর পাশে ঘুমাক মৃত্যুর চাবুক
পৃথিবীর সন্তানের কাছে দিয়ে যাব
আমাদের যা ছিল অজানা ভ্রমণ—