সোমবার, ০৫ জুলাই ২০২১, ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন
অয়ন আয়শ এর কবিতা
নিরোর প্রতি
১.
নিরো, তোমাকে বলছি
তোমার বাঁশির শব্দে আগুন জ্বলে নগরীতে
তারচে অনেক ভাল হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা
সব পুড়িয়ে ছাড়খার করার আগে ভালবেসে হাত ধর
আমি কথা দিচ্ছি, সব আগুন আমি গিলে খাব!
এই অন্ধকারে আগুনের ছোবল আকাশ ছুঁতে চায়
তার লকলকে জিভ চুমু খায় দারিদ্র্যের আলিঙ্গনে।
নিরো, তোমার বাঁশির শব্দ ভেঙে দিয়েছে আমার নদীর পাড়
সকালে খেলতে আসা চড়ুইটাকে করেছে দিগ্ভ্রান্ত
আমার প্রেমিকাকে নিয়ে গেছে স্মৃতির অতলান্তে
তোমার জ্বালানো আগুনের ওমে শহর হয়েছে কাতর
আজও ট্র্যাফিক জ্যামে কাটিয়েছি দুই ঘণ্টা
শুনেছি তারও তিন ঘণ্টা আগে তুমি গেছ এই পথ দিয়ে!
নিরো, এসো না আমরা দু’জন একান্তে আলাপ করি
মেকাপের পর্দা-সরা মুখ সে তো আমার দেখা
হয়তো দুষ্ট বালকের মতো আমি চুমু খাব তোমার ঠোঁটে
ফেলে আসা সময়ে তুমি আমি চা খেতাম শিরিষ গাছের নিচে
টঙ্ দোকানে
ওখানের ছোট্ট ফাতেমা আজও মনে রেখেছে তোমার ফরমান
চায়ে এক চামচও চিনি দেয়নি!
এসো নিরো আমরা কথা বলি
সেইসব কথা, যা জাতিপুঞ্জে ওঠে না
যে কথা শুনলে জেনারেলের শোল্ডার থেকে খসে যাবে
একটি তারা
আর সীমান্তে ফেলানীরা হেঁটে যাবে মুক্তির আনন্দে
নিরো, বল আজ তুমি কী চাও?
ফেলানী’র হাসি নাকি জেনারেলের খসে যাওয়া তারকা?
জেনে রেখো আমি চাই ফাতেমার মুখের হাসি
যে নির্দ্বিধায় জানিয়ে দেবে তোমার ফরমান
হয়তো তনুর মতো সে-ও একদিন ধর্ষিত হবে!
তার আগে এসো আমরা কথা বলি
হাত ধরি, চুমু খাই প্রেমিক-প্রেমিকার মতো
নিরো তোমার বাঁশিটা এবার থামাও
আমি এখন তোমাকে চুমু খাব!
২.
নিরো,
তোমাকে দেখলে আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করে
সেই বিধ্বস্ত জাহাজের যাত্রীর মত!
মাঝে মাঝে মনে হয় আলঝেইমার্স মুছে দিয়েছে
তোমার সকল স্মৃতি!
সেদিন টিভিতে দেখলাম রাষ্ট্রপুঞ্জের সভায়
তুমি সবুজ টিপ আর লালপাড়ের শাড়ি পরে হাসছো
যেন এখনও কিশোরী তুমি
উচ্ছাস আনন্দে ফড়িঙের পেছনে ছুটছো
নিরো, একদিন দেখ সত্যি সত্যি আমি
সাতরাস্তার মোড়ে ট্রাফিক চত্বরে তোমায় চুমু খাব
তখন রাস্তা ভেসে যাবে রক্তস্রোতে
আর রক্তের স্রোত থেকে ভেসে উঠবে
অজস্র হারিয়ে যাওয়া মুখ!
নিরো, আমাদের ভালবাসা ক্রমশ ম্লান হয়ে যাচ্ছে অবহেলায়!
৩.
নিরো, তাল কেটে গেছে কবে
মনে নেই আর!
শুধু স্মৃতির প্রতিটা পাতায় ধুলো জমে আছে
প্রাগৈতিহাসিক ফসিলের মতো।
প্রাচীন গ্রন্থ জুড়ে এখন মুর্দাঘরের কর্পূরের গন্ধ
আর তুমি পড়ে আছ, তাল নিয়ে!
তাল যখন তাল হারায়
খসে যায় গাছ থেকে
স্মৃতির পাতা থেকে
হৃদয়ের প্রটোকল ভেঙে
চোখ চলে যায় অন্য কোনও রমণীর চোখে
ডাগর চোখে প্রতারক ভালবাসা খুঁজে!
তুমি মানব শরীর বোঝ
হৃদয়ের অ্যানাটমি কি বোঝ?
চলে এসো একদিন মুর্দাঘরে
ধুলোর পরত্ সরিয়ে
তোমাকে শিখিয়ে দেব অ্যানাটমি কাকে বলে!
৪.
নিরো,
তুমি স্বৈরশাসন দীর্ঘতর করায়
আমি গণতন্ত্রের অপেক্ষায়!
তবু আমি তোমায় ভালবাসি
পৃথিবীর সম্মুখ সুখে।
তুমি ফিরে এসো হৃদয়ে
উন্মুখ বাসনায়।
আমি চুমুর অপেক্ষায়
তুমি গণতন্ত্রে ফিরে এসো
আমি অপেক্ষায়!
৫.
নিরো, প্রতিবন্ধক হও সব কিছুর
কিন্তু সুরার পাত্রটা সরিয়ে নিও না আলগোছে
এখনও পৃথিবী জেগে আছে
শেষ ট্রেনের হুইসেল শুনবে বলে।
ভরা পোয়াতি চাঁদ ঢলে পড়েছে পুব আকাশে
ট্রেনের অন্তিম শব্দ নিভিয়ে দেয়
আমাদের অনেকের গল্প।
তবু চাঁদ জেগে থাকে ক্রমশ ক্ষয়ে-ক্ষয়ে
নিরো আমি শুধু চুম্বনপ্রত্যাশী
চাঁদ ক্ষয়ে যাওয়ার আগে
আমি চুষে নিতে চাই চুমুর আস্বাদন।
নিরো, গরীবের বিলাসিতা এতটুকু সুরা
তুমি ডুবে যাও টিভির অতলান্ত দৃশ্যজালে!
আমিও কখনো বিপ্লবী হতে চাই না
বিপ্লব আর সুরা কখনো এক টেবিলে বসতে পারে না!
৬.
নিরো, চোখ বন্ধ রাখলে প্লাবন বন্ধ হয় না
আগুনের স্ফুলিঙ্গ নিভে যায় না আপনা-আপনি
মানুষ জাতপাত ভুলে একই পাত্রে খেতে বসে না
তুমি কথা দিয়েছিলে শিশুদের জন্য বাসযোগ্য করবে এই ভূখণ্ড
কিন্তু নিজেই শিশুদের শিক্ষাজীবন ধসিয়ে দিচ্ছ হঠকারিতায়!
নিরো, এসো আমরা দুজন একদিন ফুল নিয়ে যাই বিদ্যালয়ে
শিশুদের সাথে কাটিয়ে আসি একবেলা
মন প্রশান্ত হবে, বয়েসের চৌকাঠ পিছন ফেলে
দু’জনে ফিরে যাব শৈশবে, কিন্তু ছোট্টবেলার মতো
কোনও মাঠ খুঁজে পাব না এখন আর!
স্কুলগুলোতে আর মাঠ নেই, ভবনের চৌহদ্দিতে সীমানা-দেয়াল
বাইরে যানজট, অভিভাবকের স্থির মানববন্ধন
আর নিয়ত শব্দদূষণ!
তারচেয়ে ভাল ওরা পরীক্ষা দিক
বইয়ের পাতায় জীবন পার করে দিক!
বই প’ড়ে কয়জন রবীন্দ্রনাথ হয়েছে বাংলায়?